ভারত- চীন সম্পর্ক। ভারত- চীন সম্পর্কের সাম্প্রতিক প্রবনতা ২০২৪ মূল্যায়ন কর।

 

ভারত- চীন সম্পর্ক। ও তার সাম্প্রতিক প্রবনতা ২০২৪ মূল্যায়ন কর।

ভারত- চীন সম্পর্ক। ও তার সাম্প্রতিক প্রবনতা ২০২৪ মূল্যায়ন কর। 


চীনের সঙ্গে ভারতের ৪০৫৬ কিলোমিটার সীমান্ত পাহারা দেওয়া সহজ কথা নয়। আকসাই চীন অঞ্চলের ১৫ হাজার বর্গমাইল এলাকাকে ভারত তাদের এলাকা বলে দাবি করে। অন্যদিকে ভারতের উত্তর-পূর্বের রাজ্য অরুণাচলকে চীন তাদের এলাকা বলে মনে করে। চীন আর ভারতের সীমান্ত বিরোধ অনেক পুরোনো ।

 

ভারত- চীন ইতিহাস:


১৯৪৭ সালে ভারত সরকার মার্কিন বিমানবাহিনীকে ৬টি বিমান ঘাঁটি ব্যবহার করতে দিয়েছিল । এই ঘাঁটিগুলো থেকে মার্কিন বাহিনী চীনের ভেতর কমিউনিস্ট বাহিনির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল। এর পাশাপাশি ১৯৫০ সালে যখন চীনা কমিউনিস্ট পার্টি বা গণপ্রজাতন্ত্রী চীন তিব্বত পুর্নদখল করে, তখন সেখানে একটি গেরিলা গোষ্ঠী চীনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালায়। এই গেরিলা গোষ্ঠীকে গোপনে ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্র মদদ যুগিয়েছিল। সেই সংঘাতের প্রেক্ষাপটেই কিন্তু ১৯৬২ সালের যুদ্ধ হয়েছিল। চীন এবং ভারতের মধ্যে বড় ধরণের কনভেনশনাল বা প্রথাগত সম্মুখ লড়াই হয়েছিল একবারই, ১৯৬২ সালে। কিন্তু ঐ যুদ্ধের পর বিগত দশকগুলোতে এশিয়ার এই দুটি দেশ বিপুল সমরাস্ত্র সম্ভার গড়ে তুলেছে, পরমাণু শক্তিধর দুই দেশের মধ্যে বৈরিতাও বেড়ে চলেছে।


সীমান্ত নিয়ে বিরোধ:


ভারত ও চীনের মধ্যে কোনও সুনির্দিষ্ট ও সুচিহ্নিত আন্তর্জাতিক সীমানা নেই, তার বদলে আছে কয়েক হাজার কিলোমিটার লম্বা একটি প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বা লাইন অব অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল, যা লাদাখ থেকে অরুণাচল প্রদেশ পর্যন্ত বিস্তৃত । দুটি দেশের কোনটিই সীমান্তরেখা মেনে নেয়নি। চীনের হিসেব অনুযায়ী অষ্টাদশ শতাব্দীতে যে সীমান্তরেখা ছিল, তাতে অরুণাচল প্রদেশ এবং লাদাখের কিছু অংশ তৎকালীন চীন সাম্রাজ্যের অংশ ছিল।


ব্রিটিশরা যখন ১৯১৩ সালে সিমলা চুক্তি করে একটি সীমান্তরেখা একেঁছিল, ম্যাকমোহন লাইন এবং অন্যান্য লাইন, সেটা চীন কখনো মানেনি। কিন্তু ব্রিটিশদের চিহ্নিত সেই সীমারেখাই ভারত বরাবার দাবি করেছে। কাজেই দুপক্ষের মধ্যে সীমান্ত নিয়ে ব্যাপক মতবিরোধ রয়েছে। কিন্তু মতবিরোধ মানেই যে যুদ্ধ, তা নয়। যুদ্ধ তখনই হয়, যখন দুটি প্রতিদ্বন্দ্বী দেশের নেতারা সিদ্ধান্ত নেন যে তাদের পক্ষে অন্যপক্ষের অবস্থান আর মেনে নেয়া সম্ভব নয় । তখন যুদ্ধ বাধে।

 

বিভিন্ন পদক্ষেপঃ


চীন এবং ভারত, দুটি দেশই গত বছর দশেক ধরে তাদের সীমান্ত এলাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি ঘটিয়েছে। চীন এটা করেছে তিব্বতে। আর ভারত করেছে দক্ষিণের অরুণাচল প্রদেশে এবং লাদাখ অঞ্চলে। দুটি দেশই এসব জায়গায় রাস্তাঘাট করেছে, বিমান ঘাঁটি বানিয়েছে। রাডার স্টেশন বসিয়েছে। সৈন্য সমাবেশ বৃদ্ধি করেছে। দু'পক্ষই বিভিন্ন ধরনের যুদ্ধ সরঞ্জাম মোতায়েন করেছে। সেখানে সামরিক মহড়াও দিয়েছে দুই দেশ। কাজেই একটা যুদ্ধংদেহী মনোভাব সাম্প্রতিক মাসগুলোতে দেখা যাচ্ছে। শ্রীনগর-লে জাতীয় মহাসড়াকের পাশে বাংকার নির্মাণ করছে ভারতীয় বাহিনী। পূর্ব ভারতে স্বতন্ত্র গোর্খা রাজ্যের দাবির পেছনে চীনের ইন্ধন রয়েছে বলে অভিযোগ।


এর পাশাপাশি চীন এবং ভারত, দুই দেশেই জাতীয়তাবাদী একটি মনোভাব জোরালো হয়ে উঠেছে। দুটি দেশের সংবাদ মাধ্যমগুলো দেখলে, বিশেষ করে ভারতে, এটা বেশ চোখে পড়বে। সেখানে চীনকে একটি বৈরি দেশ হিসেবে চিহ্নিত করে অনেক কথা বলা হচ্ছে। চীনের সংবাদমাধ্যমগুলোতে অবশ্য ভারত অতটা গুরুত্ব পাচ্ছে না। কিন্তু তারপরও যখনই ভারত সম্পর্কে কথা উঠছে, সেখানে জাতীয়তাবাদী একটা মনোভাব বেশ স্পষ্ট। সুতরাং এটা বলা যায়, রাজনৈতিক এবং কূটনৈতিকভাবে যে বৈশ্বিক মেরুকরণ, সেখানে ভারত এবং চীনের মধ্যে একটা দ্বন্দ্ব রয়েছে।


দ্বিতীয়ত: 

ভারত ও চীনে জাতীয়তাবাদী চিন্তা বর্তমান সময়ে প্রবল আকার ধারণ করেছে। ভারতের বিজিপি শাসিত নরেন্দ্র মোদির সরকার জাতীয়তাবাদকে চরমভাবে ফুটিয়ে তুলছে। 


তৃতীয়ত:

যেসব সীমান্ত এলাকায় দুই দেশের সশস্ত্র বাহিনী সামনাসামনি মোতায়েন আছে, সেখানে উত্তেজনা ক্রমশ বাড়ছে। কাজেই সবকিছু মিলিয়ে পরিস্থিতি বেশ জটিল।


সামরিক শক্তি:


দুটি দেশেরই বিপুল অস্ত্রসম্ভার রয়েছে এবং এসব অস্ত্রশস্ত্র বেশ আধুনিক। গত ২০ বছর ধরে দুটি দেশ শুধু নিজেরাই সমরাস্ত্র তৈরি করেনি, একই সঙ্গে অস্ত্র আমদানিও করেছে। বিশেষ করে ভারত পরপর পাঁচ বছর বিশ্বের সবচাইতে বেশি অস্ত্র আমদানিকারক দেশের স্থান দখল করেছিল। যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া এবং ইসরায়েল থেকে তারা অনেক অত্যাধুনিক অস্ত্র এনেছে।


তারা নিজেরাও বিদেশি প্রযুক্তি এনে নিজেরা অস্ত্র তৈরি করেছে। একইভাবে চীন রাশিয়া থেকে কিছু অস্ত্র কিনেছে, কিন্তু বেশিরভাগ অস্ত্র তারা এখন নিজেরা উৎপাদন করে। বিমান বহর এবং ক্ষেপণাস্ত্র হয়তো তারা ব্যবহার করতে পারবে। কিন্তু যাকে আমরা সেনাবাহিনী বলি, যারা মাটিতে যুদ্ধ করে, তারা তাদের গোলন্দাজ, সাঁজোয়া বা ট্যাংক বহর খুব একটা ব্যবহার করতে পারবে বলে মনে হয়না ।


চীন-ভারত সংঘাত:


লাদাখ সীমান্তের গালোয়ান উপত্যকায় গত কয়েকবছর ধরে ভারত যেভাবে রাস্তাঘাট সহ অবকাঠামো তৈরি করছে তাতে চীন সত্যিই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে, এবং ভারতের এই কর্মকান্ড তারা আর মেনে নিতে রাজি নয়। গত দশ-বারো বছরে সীমান্তের পাহাড়ি এলাকায় ভবিষ্যতে সম্ভাব্য যুদ্ধের প্রস্তুতি হিসাবে ভারত যেভাবে ব্যাপক হারে অবকাঠামো নির্মাণ করে চলেছে তাতে চীন বেশ কিছুদিন ধরে উদ্বিগ্ন। পশ্চিম জিনজিয়াং প্রদেশের কাসগর শহর থেকে তিব্বতের রাজধানী লাশা পর্যন্ত সামরিক কৌশলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ যে মহাসড়ক চীন তৈরি করেছে তার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে চীনের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।

 

ভারত এবং চীনের মধ্যে যদিও সীমান্ত চিহ্নিতকরণ হয়নি,তথাপি  দু'পক্ষের মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ে সীমান্তের তিনটি এলাকাতে  নিজেদের শক্তি প্রদর্শন করেছে।  আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতা হয়েছিল যে বর্তমানে যে পরিস্থিতি, সেটা লংঘন করা হবে না। কেউই বিদ্যমান পরিস্থিতি পাল্টানোর চেষ্টা করবেন না। চীনা সেনাবাহিনী অন্তত চার জায়গায় সীমারেখা অতিক্রম করে অবস্থান নিয়েছে। সেই জায়গাগুলো হল লাদাখের গ্যাংগং সো বা প্যাংগং লেক, গালওয়ান নালা ও ডেমচকু আর সিকিমের নাকুলা।

 

চীনের সঙ্গে লাদাখে  সংঘাতে ২০ ভারতীয় সেনা নিহত হওয়ার পর চীনের  উপর 'ডিজিটাল  স্ট্রাইক' চালিয়েছিল ভারত সরকার। প্রথমে ৫৯টি চীনা অ্যাপ নিষিদ্ধ করা হয়। পরে ওই অ্যাপগুলোর চীনের সঙ্গে লাদাখে সংঘাতে ২০ ভারতীয় সেনা নিহত হওয়ার পর বেইজিংয়ের ওপর 'ডিজিটাল সহযোগী আরও ৪৯টি অ্যাপ নিষিদ্ধ করা হয়। 

 

এখন আরও ১১৮টি অ্যাপ বন্ধের সিদ্ধান্ত এল। এ নিয়ে ভারতে ২২৪টি চীনা অ্যাপ নিষিদ্ধ হলো। এসব অ্যাপ্লিকেশনের মধ্যে গেমস, অনলাইন পেমেন্ট সার্ভিস, ডেটিং সাইট ও সেলফি এডিট করার সফটওয়্যারও আছে। টিকটক, উই চ্যাট, জনপ্রিয় ভিডিও গেম পাবজিসহ চীনা ইন্টারনেট জায়ান্ট টেনসেন্টের অন্যান্য অ্যাপস নিষিদ্ধ করেছে ভারত।

 

ভারত সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তাদের কাছে তথ্য আছে যে এই চীনা অ্যাপগুলো ভারতের সার্বভৌমত্ব ও অখন্ডতা, প্রতিরক্ষা, রাষ্ট্রীয় সুরক্ষা ও আইনশৃঙ্খলা' বিরোধী কাজ করছে। ভারত অভিযোগ করেছে এসব অ্যাপ তথ্য চুরি করে তা স্থানান্তর করা হয়েছে চীনে। লাদাখের গালওয়ান ভ্যালিতে ভারত ও চীনের সেনাবাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষে ৭ সেপ্টেম্বও (২০২০) রাতে দু'পক্ষেই বেশ কয়েকজন সেনা হতাহত হওয়ার পর দুই দেশের মধ্যে সামরিক উত্তেজনা যেন হঠাৎ বহুগুণ বেড়ে গেছে।

 

এখন ঐদিন রাতে যে ঘটনা ঘটেছে সে সম্পর্কে চীনা এবং ভারতীয়, দুপক্ষের বক্তব্য একেবারে পরস্পরবিরোধী। দু'পক্ষই বলছেন যে অন্য পক্ষের সেনাবাহিনী তাদের আগের অবস্থান থেকে সামনে এগিয়ে এসে ভূমি দখল করেছেন এবং এবং সেকারণেই হাতাহাতি-মারামারি হয়েছে। কাজেই পরিস্থিতি একটু ঘোলাটে।


দুপক্ষই পরস্পরবিরোধী বক্তব্য রাখছে। কারা যে কোন এলাকায় ঢুকেছে সেটা বোঝা যাচ্ছে না। কিন্তু এটা স্পষ্ট যে দুপক্ষই তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকা ছেড়ে দিতে একেবারেই রাজি নয় এবং প্রয়োজনবোধে তারা হাতাহাতি করবেন। এবং সেটা তারা করেছেন। তবে গোলাগুলি হয়েছে এমনটা শোনা যায়নি।

 

চীন-ভারত সংঘাত কতটা উদ্বেগজনক?


সেনবাহিনী বা সশস্ত্রবাহিনী যা কিছু করে, তার পেছনে একটা রাজনৈতিক-কূটনৈতিক প্রেক্ষাপট থাকে। বর্তমানে ভারত এবং চীনের মধ্যে যে সম্পর্ক রয়েছে, সেটা বিশ্বজনীন প্রেক্ষাপটে সেটা বেশ বৈরি। বিশ্ব রাজনীতিতে এই দুই দেশের অবস্থান দুই প্রতিদ্বনদ্বী শিবিরে। আন্তর্জাতিকভাবে চীনের সেই অর্থে কোন মিত্র নেই। তাদের একটি মিত্রদেশ হচ্ছে পাকিস্তান।

 

অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র ২০ বছর ধরে বলা যায় ভারতের মিত্র রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। ১৯৯৯-২০০০ সাল হতে যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারতের সম্পর্ক ক্রমশ ঘনিষ্ঠ হয়েছে। এর মধ্যে সামরিক সহযোগিতার ব্যাপারটিও রয়েছে। এই সহযোগিতা গত দুই দশকে অনেক দৃঢ় হয়েছে। ভারত বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন কয়েকটি সামরিক জোটের অংশগ্রহণ করেছে।

 

অন্যদিকে যেহেতু যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক গত কয়েক বছরে বেশ বৈরি হয়ে গেছে, ভারত- মার্কিন সামরিক সহযোগিতাকে তাই তারা মোটেই পছন্দ করছে না। চীন এবং ভারতের মধ্যে বৈরিতার এরকম একটা আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক প্রেক্ষাপট আছে। এই প্রেক্ষাপটে চীন- ভারত সম্পর্ক ক্রমশ শত্রুভাবাপন্ন হয়ে দাঁড়ড়িয়েছে। সেই আলোকে দেখতে গেলে এই সীমান্ত বিরোধ তাদের মধ্যকার শত্রুতার একটি প্রকাশ মাত্র।


দুই দেশ সম্মুখ যুদ্ধে জড়িয়ে যেতে পারে?


প্রথমত,

দুটি দেশেরই স্বার্থ হচ্ছে যুদ্ধে না জড়ানো। কারণ যুদ্ধ হলে ক্ষয়ক্ষতি বেশ ব্যাপক হবে। দুটি দেশেরই ক্ষতি হবে। কাজেই দুই দেশই শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান চাইছে। চীন এবং ভারত উভয়েরই পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে। দুই দেশের সংঘাতে যদি ক্রমবর্ধমান হারে ভয়ংকর সমরাস্ত্রের ব্যবহার হতে থাকে, দুই দেশই আসলে পরস্পরকে ধ্বংস করে দেয়ার ক্ষমতা রাখে ।


দ্বিতীয়ত, 

ভারত এবং চীনের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক এখন ব্যাপক আকার নিয়েছে। বিশ্বব্যাপী একটা অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে কোন দেশই এরকম একটা সম্পর্ক ক্ষুন্ন করতে চাইবে না।


তৃতীয়ত,

যুদ্ধ যদি খুব বেশি ছড়িয়ে পড়ে, সেটা যে ভয়ংকর বিপদ ডেকে আনতে পারে সেটা দুপক্ষই বোঝেন। কারণ দুটি দেশই পারমানবিক শক্তিধর। কাজেই তাদের চেষ্টা থাকবে উত্তেজনা কমিয়ে আনার। মনে হয় না, চীন ভারতের মধ্যে কোনও যুদ্ধ হবে। চীন ভারতের মধ্যে প্রায় ১০ হাজার কোটি ডলারের বাণিজ্য হয়। এই বাণিজ্যে চীন বেশি লাভবান সত্য, কিন্তু বাণিজ্য বন্ধ হলে চীনের চেয়ে ভারতেরই ক্ষতি বেশি। কারণ, তার পণ্য বাজার এবং কলকারখানা চীনের ওপর অনেক নির্ভর।


চীন ব্যবসায়ে আসক্ত, তারা ভারতের মতো এত বড় একটি বাজার সহসা নষ্ট করতে চাইবে না। আবার পাকিস্তানকে যতই যুদ্ধের উস্কানি দিক, চীনের সঙ্গে যুদ্ধ বাধলে মুখরক্ষার উপায় থাকবে না বলে হিন্দুত্ববাদী নরেন্দ্র মোদি যুদ্ধের কোনও ঝুঁকি নেবে না। সামরিক শক্তিতে চীন এখন ভারতের চেয়ে বহুগুণ এগিয়ে। এখন যুদ্ধের ঝুঁকি নিলে এবং পরিপূর্ণ একটি যুদ্ধ হলে চীনের বিজয়কে ঠেকানো ভারতের পক্ষে সম্ভব হবে না - একথাটা ভারত সরকার ভালোভাবে উপলব্ধি করতে পারে।

 

সর্বশেষ পরিস্থিতি


চীনা বাহিনীর হাতে সম্প্রতি লাদাখে ২৩ ভারতীয় সেনা নিহত হলে মস্কো উত্তেজনা প্রশোমনে তিন দেশের  পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের মধ্যে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে  আলোচনার আয়োজন করেন। এর মধ্যেই রাশিয়া সফরে যান ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। চীন-ভারতের সীমান্ত বিরোধ মেটাতে দৃশ্যত এখন মরিয়া রাশিয়া । রিক (রাশিয়া, চীন, ভারত), ব্রিকস (ব্রাজিল, ভারত, চীন, দক্ষিণ আফ্রিকা) এবং এসসিও (সাংহাই কর্পোরেশন অর্গানাইজেশন)-এর চলতি বছরের নেতৃত্ব মস্কোর হাতে। 

ভারত-চীন এই তিনটি সংগঠনেই রয়েছে। রাশিয়া আন্তর্জাতিক শক্তির ভারসাম্য রক্ষায় তথা নিজের প্রভাব আরও সংহত করতে এই সংগঠনগুলোকে কাজে লাগাতে উন্মুখ। সেক্ষেত্রে চীন-ভারত সহাবস্থান মস্কোর জন্যও জরুরি। রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মধ্যস্থতায় সম্প্রতি সাংহাই কর্পোরেশনের বৈঠকের উছিলায় ১০ সেপ্টেম্বর ২০২০ সালে চীন ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সমঝোতা চুক্তিতে সই করেন।  এর মাধ্যমে চীন- ভারতের সাম্প্রতিক সংঘাতের আপাতত অবসান হবে বলে  মনে হচ্ছে। 

 

Post a Comment

Previous Post Next Post