যে সহে সে রহে
ভাবসম্প্রসারণ
মানুষের মতো
বাঁচতে হলে বা আপনার অস্তিত্ব বজায় রাখতে হলে এবং জীবনে সাফল্য অর্জন করতে হলে
সর্বাগ্রে প্রয়োজন সহনশীলতা। প্রকৃতিবিজ্ঞানী ডারউইন-এর তত্ত্ব Survival of the
fittest অনুযায়ী পৃথিবীতে যোগ্যেরই বেঁচে থাকার অধিকার আছে। তাই বিশ্বসংসারে সহ্য
করার শক্তি ও যোগ্যতা যার আছে সেই কেবল বেঁচে থাকার অধিকারী।
সহনশীলতা
মানবজীবনের অন্যতম সাম্যনীতি। পৃথিবীতে অবিমিশ্র সুখ-দুঃখ বলে কিছু নেই। সুখ- দুঃখ
আসলে মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। বিপদাপদের মধ্য দিয়েই মানুষের যাত্রা শুরু হয়। তাকে
সংগ্রাম করতে হয় নানা প্রতিকূল অবস্থার সঙ্গে।
রোগ-শোক,
দুঃখ-দারিদ্র্য, অন্যায়-অবিচার এসবের চাপে মানব পর্যুদস্ত হয়; চোখে বিভীষিকা
দেখে। কিন্তু এসব প্রতিরোধ করার জন্য চাই শক্তি, অধ্যবসায় ও সহিষ্ণুতা। যুদ্ধে
জয়-পরাজয় আছেই কিন্তু যে মানুষ পরাজয়কে অম্লান বদনে মাথা পেতে নিয়ে পরবর্তী
বিজয়ের জন্য ব্রতী হয় এবং বিজয় অর্জন করতে পারে, সেই যথার্থ বীর ।
ইতিহাসের পাতায়
এরূপ বহু দৃষ্টান্ত খুঁজে পাওয়া যায় । স্কটল্যান্ডের রাজা রবার্ট ব্রুস
ইংল্যান্ডের রাজা এডওয়ার্ড-এর সাথে ছয়বার যুদ্ধে পরাস্ত হয়েও ধৈর্য ধারণ
করেছিলেন এবং সহিষ্ণুতার গুণে পুনরায় যুদ্ধ করে সপ্তমবারের প্রচেষ্টায় শত্রুর
কবল থেকে স্বদেশ উদ্ধার করেন ।
দরিদ্রের ঘরে
জন্মগ্রহণ করেও একমাত্র ধৈর্য-সহিষ্ণুতার কারণে জন ব্রিটন ল্যান্ডেন, স্যামুয়েল
হয়েছিলেন জগৎ বিখ্যাত । রুটিওয়ালার ছেলে জন ব্রিটন প্রসিদ্ধ সাহিত্যিকরূপে জীবনে
মোট ৮৭টি গ্রন্থ রচনা করে গেছেন।
ল্যান্ডেন ছিলেন
কৃষকের ছেলে আর স্যামুয়েল মুচির ছেলে। বিদ্রোহী কবি নজরুল ইসলাম আজীবন
দারিদ্র্যের সঙ্গে সংগ্রাম করেছেন; সহ্য করেছেন দারিদ্র্যের কষাঘাত। তাঁর সহনশীলতা
তাঁর প্রতিভাকে করেছে বিকশিত।
যীশুকে
ক্রুশবিদ্ধ করার পরও তিনি অসহিষ্ণু হননি। মহানবীর জীবনালেখ্য সহনশীলতার এক
অসামান্য দলিল । তাই তো তিনি মক্কা বিজয়ের পরও বন্দিদেরকে দিলেন নিঃশর্ত মুক্তি ।
ঘোষণা করেন, “তোমরা সবাই মুক্ত, স্বাধীন।' এই সহনশীলতায় মুগ্ধ হয়েই আশ্চর্য
কণ্ঠে বলে ওঠেন উইলিয়াম , The magnanimity with which Mohammed treated a people
who had so long hated and rejected him is worthy of admiration.'