আল আসাবিয়া কাকে বলে? রাষ্ট্র গঠনে আল আসাবিয়ার অবদান মূল্যায়ন কর।

 

আল আসাবিয়া কাকে বলে? রাষ্ট্র গঠনে আল আসাবিয়ার অবদান মূল্যায়ন কর।


আল আসাবিয়া কাকে বলে? রাষ্ট্র গঠনে আল আসাবিয়ার অবদান মূল্যায়ন কর।


ভূমিকা:

ইতিহাস ও দর্শনের ক্ষেত্রে ইবনে খালদুন এক অবিস্মরণীয় নাম। তাকে সমাজতত্ত্বের জনক বলা হয়। তিনি উত্তর আফ্রিকার তিউনিস শহরে ১৩৩২ সালে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা প্রখ্যাত একজন আলেম ছিলেন। ইবনে খালদুন রাষ্ট্রগঠনে আল আসাবিয়াকে অধিকতর গুরুত্ব দিয়েছেন। 

আল আসাবিয়া কাকে বলে?

আল আসাবিয়া সমাজতত্ত্বের বিষয়বস্তু ও রাষ্ট্রীয় দর্শনের উত্থান-পতন, বিস্তৃতি লাভে ইবনে খালদুনের যে ধারণা বা প্রত্যয়টি সবিশেষ প্রাধান্য লাভ করেছে সেটি আল আসাবিয়া। একে আবার Social Solidarity বা সামাজিক সংহতি বলা হয়। আল আসাবিয়া বা সামাজিক সংহতি বলতে ইবনে খালদুন বুঝিয়েছেন সমাজের মানুষের একত্ববোধকে যা শক্তিশালী রাষ্ট্র তথা জাতি গঠনে সাহায্য করে। 

এক্ষেত্রে ইবনে খালদুন সামাজিক সম্পর্কের উপর জোর দেন। আসাবিয়া হচ্ছে ইবনে খালদুনের কেন্দ্রীয় সমাজতাত্ত্বিক প্রত্যয়। আসাবিয়া তথা সামাজিক সংহতি প্রত্যয়টি খালদুনের সাধারণ এবং রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞানের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত। সে কারণে খালদুনের সভ্যতা অধ্যয়নের কেন্দবিন্দুতে যে বিষয়টি অবস্থান করেছে তা হলো ক্ষমতা রাষ্ট্রতত্ত্ব। 


রাষ্ট্র গঠনের ক্ষেত্রে আল-আসাবিয়ার গুরুত্ব: 


ইবনে খালদুন আসাবিয়া বা সামাজিক সংহতির ক্ষেত্রে বিশেষ কিছু উপাদানের কথা উল্লেখ করেন। এগুলো নিম্নে আলোচনা করা হলো:

১. রক্তের সম্পর্ক;

২. সার্বভৌমত্ব;

৩. ধর্মের সম্পর্ক;

৪. সংহতির উপর নির্ভরশীল যুক্ত বন্ধুত্ব;

৫. বিবাহ;

 ৬. নিয়মকানুন;

৭. গোষ্ঠীগত সংহতি;

৮. বংশগত একত্ব ও

 ৯. পারস্পরিক নির্ভরশীলতা।

 

তিনি সমাজ ও রাষ্ট্র দর্শন বিশ্লেষণে আশাবিয়া প্রত্যয়ের উপর অত্যধিক গুরুত্ব দেন। বিশেষ করে উপজাতীয়দের সংহতির ক্ষেত্রে তিনি আসাবিয়াকে বেশি ব্যবহার করেছেন তার কারণ নিম্নরূপ:

উপজাতীয় সংহতি ইবনে খালদুন Tribal Society বা উপজাতীয় সমাজকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। কারণ তিনি মনে করেন উপজাতীয়দের দ্বারাই মূলত রাষ্ট্রের উত্থান পতন সংগঠিত হয়। কেননা তার মতে, পাশ্চাত্য সমাজ প্রথম গ্রিসে আত্মপ্রকাশ করে।

গ্রিক সভ্যতার পর রোমান সাম্রাজ্যের উত্থান হয়। তবে এ সাম্রাজ্য মাত্র ৩০০ বছর টিকে ছিল। কিন্তু এরা ছিল উপজাতি। কিন্তু পরবর্তীকালে দাসদের সরবরাহ হ্রাস পাওয়ায় তাদের সাম্রাজ্যের পতন ঘটতে থাকে জার্মান উপজাতি ওনদের নন ডেলকের আক্রমণে ১৪৫৪ সালে পূর্ব রোমান সাম্রাজ্যের পতন হয় অটোমান উপজাতির হাতে।

রোমান সাম্রাজ্যের পতনের পর ইউরোপ ছিল ৩০০-৪০০ বছর অন্ধকার যুগ। এরপর একজন মঙ্গোলিয়ান উপজাতি চেঙ্গিস খান নিজেকে ৫১ বছর বয়সে মঙ্গোলিয়ান উপজাতির কাউন্সিলর ঘোষণা করেন। তিনি উত্তর কোরিয়া, চীন, তাতার, মধ্য এশিয়া, রাশিয়া ইত্যাদি অঞ্চল দখল করেন।

১২২৭ সালে তার মৃত্যুর পুত্রকে হত্যা করে। এরপর তার যাতি মংংরা আক্রমন্তাই হালাকু খান বাগদাদ আক্রমণ করেন এবং অনেক ধারে এর ২৫৮ সালে পর পোল্যান্ড, হাঙ্গেরী, অস্ট্রিয়ার যৌথ সৈন্যরা করে তার আব্বাসীয় বংশের পতন ঘটে।

এরপর ১৪০০ সালে তৈমুর লং দামেস্ক আক্রমণ করেন। তৈমুর লং এর সাথে আলাপ আলোচনার জন্য পাঠানো হয়েছিল ইবনে খালদুনকে। রাষ্ট্রের উত্থান পতনে সবচেয়ে বেশি কাজ করে উপজাতীয় আক্রমণ। কারণ ইবনে খালদুনের সময় ছিল সবচেয়ে বিক্ষুব্ধ সময়।

মুসলিম সভ্যতা, আব্বাসীয় জ্ঞান বিজ্ঞানের ধ্বংস পারস্যের কয়েকজন কবি ছাড়া আর কোনো জ্ঞান বিজ্ঞানের নিদর্শন পাওয়া যায়নি। রোমান সাম্রাজ্যের পতন, চীন সাম্রাজ্যের পতন, তাতারদের আক্রমণ থেকে দেখা যায় ধনতন্ত্রের আগপর্যন্ত ইউরোপে উপজাতীয়দের আক্রমণ চলছিল। আর সে মুহূর্তে ইবনে খালদুন জন্মগ্রহণ করেন।

এগুলোর জন্য তার কাছে রাষ্ট্র ও সমাজ এক সূত্রে গাঁথা। যেহেতু উপজাতীয় আক্রমণই মূলত সাম্রাজ্যের উত্থান পতনের কারণ তাই তিনি তার মূল আলোচনার জন্য আল আসাবিয়ার উপর বা সামাজিক সংহতির উপর বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। তাই তিনি দেখিয়েছেন- Asabiyah Progressive Force State.

 

উপসংহার: 

পরিশেষে বলা যায় যে, রাষ্ট্রগঠনে আসাবিয়া বা সামাজিক সংহতির গুরুত্ব অপরিসীম। আর এটি মূলত উপজাতীয় সংহতির ক্ষেত্রে বেশি কার্যকরী হয়। তাই রাষ্ট্র গঠনে উপজাতীয় সংহতির গুরুত্ব অনেক বেশি সামাজিক সংহতির অংশ হিসেবে । 


Post a Comment

Previous Post Next Post