নদীয়া সম্পর্কে যা জান লিখ

 নদীয়া সম্পর্কে যা জান লিখ

নদীয়া সম্পর্কে যা জান লিখ


ভূমিকা : বাংলায় সেন বংশের শাসনামলে নদীয়া ছিল ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান। তবে সেটা তাদের রাজধানী ছিল না। এখানে সেন বংশের শেষ রাজা লক্ষ্মণ সেন বাস করতেন। এ কারণে কোনো কোনো ঐতিহাসিক নদীয়াকে উপরাজধানী বা অস্থায়ী রাজধানী হিসেবে বর্ণনা করে থাকেন।

 

মূলত ইতিহাসে নদীয়া স্থানটি বেশি আলোচিত হওয়ার কারণ হলো মুসলিম সেনাপতি বখতিয়ার খলজির নদীয়া জয়ের ফলে বাংলায় সেন শাসনের অবসান ঘটে এবং বাংলার মাটিতে হিন্দু শাসনের অবসান হয়।

 

১. নদীয়ার পরিচয়:

 নদীয়া গঙ্গা নদীর তীরে কোলাহলমুক্ত শান্ত-শান্তিময় একটি স্থান ছিল। এজন্য সেন বংশের রাজা লক্ষ্মণ সেন রাজধানীতে বাস না করে নদীয়াতেই বসবাস করতেন। লক্ষ্মণ সেনের বসবাসের কারণে নদীয়াকে রাজধানী বলা হয় না; বরং এটা ছিল রাজনিবাস বা বঙ্গের অস্থায়ী বা উপরাজধানী। লক্ষ্মণ সেনের নদীয়ায় অবস্থানকে কেন্দ্র করে বহু লোক এখানে বসবাস করতেন।

 

২. বখতিয়ার খলজির নদীয়া আক্রমণ :


উত্তর আফগানিস্তানের বাসিন্দা ও তুর্কি জাতির খলজি সম্প্রদায়ের বখতিয়ার খলজি তার ভাগ্য উন্নয়নের জন্য ভারতে আসেন এবং ছোট ছোট হিন্দু রাজ্য আক্রমণ করে লোক সমর্থন ও সম্পদ সঞ্চয় করেন। ১২০৪ খ্রিষ্টাব্দে  নদীয়া আক্রমণ ও জয় করেন।

 

৩. নদীয়া বিজয় :


ইতিহাসে বলা হয়ে থাকে যে, মাত্র ১৮ জন ঘোড়সওয়ার সৈন্য বখতিয়ার খলজির সঙ্গে নগরে প্রবেশ করেছিল। নগরবাসীরা তাকে ঘোড়া ব্যবসায়ী মনে করেছিল। এজন্য তিনি বাধার সম্মুখীন হননি।

আর সে কারণেই বখতিয়ার খলজি অতর্কিতে আক্রমণ চালিয়ে সহজেই রাজপ্রাসাদ দখল করতে পেরেছিলেন। রাজা লক্ষ্মণ সেন নৌপথে তার রাজধানী বিক্রমপুরে পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। ইতিমধ্যে বখতিয়ার খলজির মূল বাহিনীও এসে পড়েছিল। ফলে নদীয়া মুসলমানদের হস্তগত হয়।


নদীয়া সম্পর্কে যা জান লিখ

 

৪. বখতিয়ার খলজির নদীয়া আক্রমণের কারণ :


 বখতিয়ার খলজি ভারতে এসে বিহার জয়ের পর রাজধানী গৌড় আক্রমণ না করে নদীয়া আক্রমণ করলেন কেনো এ ধরনের প্রশ্ন দেখা দেয়। এর উত্তরে বলা হয়েছে সমকালীন রাজনীতিতে রাজার সঙ্গে রাজ্যের উত্থান পতন নির্ভর করতো। 

তাই রাজা লক্ষ্মণ সেন যখন নিজেই নদীয়া বা নবদ্বীপে বসবাস করতেন তখন রাজধানীর চেয়ে রাজার অবস্থান স্থলই বখতিয়ার খলজির কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে।

 

৫. নদীয়া আক্রমণের সময়কাল :


 বখতিয়ার খলজির নদীয়া বিজয়ের সময় নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। কোনো কোনো ঐতিহাসিক ১২০০ থেকে ১২০৫ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে বখতিয়ার খলজি নদীয়া জয় করেছেন বলে উল্লেখ করলেও এডওয়ার্ড টমাস ১২০২-১২০৩ খ্রিষ্টাব্দ, চার্লস স্টুয়ার্ট ১২০৩- ১২০৪ খ্রিষ্টাব্দ বলে উল্লেখ করেছেন। আর তাবাকাত-ই-নাসিরি গ্রন্থের মতে, ১২০১ খ্রিষ্টাব্দে নদীয়া মুসলমানদের হস্তগত হয়।

 



পরিশেষে বলা যায় যে, নদীয় ছিল তখনকার সময়ের অন্যতম সমৃদ্ধ নগরী।  বখতিয়ার খলজির নদীয়া জয়ের ফলে বাংলায় সেন শাসরে  অবসান হয় এবং বাংলার মাটিতে হিন্দু শাসনের স্থলে মুসলিম শাসনব্যবস্থা চালু হয়।

Post a Comment

Previous Post Next Post