চলকের সংজ্ঞা দাও? চলকের প্রকারভেদ আলোচনা কর।
ভূমিকা: বিজ্ঞান একটি বিমূর্ত প্রত্যয়। আর বিজ্ঞানের ভিত্তি হলো বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি। বিজ্ঞানের উদ্ভব ও বিকাশ এবং অব্যাহত অগ্রগতির যাত্রা বজায় রাখে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির বিভিন্ন উপাদান রয়েছে।
যার মধ্যে চলক অন্যতম। সামাজিক গবেষণায়
'চলক' অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। চলক হচ্ছে এমন এক ধরনের মান, গুণ, অবস্থা,
বৈশিষ্ট্য বা বৈজ্ঞানিক গবেষণায় কোনো নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে অনুসন্ধান করা হয় এবং যা
প্রেক্ষাপট অনুযায়ী বিভিন্নরূপে প্রকাশ পায়।
চলকের সংজ্ঞা:
সাধারণ কথায় বলা যায়, যা পরিবর্তিত হয়
তাই চলক। মূলত চলক এমন এক ধরনের গুণ, বৈশিষ্ট্য, অথবা অবস্থা যা একই পরিপ্রেক্ষিতে
ব্যক্তি, একক কিংবা ঘটনা পরিবর্তনের সাথে সাথে বিভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
অন্যভাবে বলা যায়, যে ধারণা একাধিক প্রকারভেদ
বা মূল্যমান ধারণ করে তাকে চলক বলে। আবার বলা যায়, চলক বলতে ধারণার বৈশিষ্ট্যের তারতম্য
বোঝায়। নিম্নে চলক সম্পর্কে কতিপয় জনপ্রিয় সংজ্ঞা প্রদত্ত হলো।
Barry F. Anderson (1966: ৪) উল্লেখ করেছেন যে, "A variable is a set of mutually exclusive properties." অর্থাৎ, চলক হলো পরস্পর বিচ্ছিন্ন গুণের সমাবেশ।
Earl R. Babble (1975: 720) এর মতে, "Variables are logically related sets of attributes," অর্থাৎ, চলক হলো যৌক্তিকভাবে সম্পর্কযুক্ত গুণাবলির সমষ্টি।
P. V. Young (1984: 280) এর মতে,
"A variable is any quantity or characteristics which may possess different
numerical values or categories." অর্থাৎ চলক হলো যেকোনো পরিমাণ বা বৈশিষ্ট্য
যা বিভিন্ন সংখ্যামান অথবা শ্রেণিতে বিভক্ত।
তাই বলা যায়, চলক হচ্ছে এক ধরনের গুণ,
মান, অবস্থা, বা বৈশিষ্ট্য যা বৈজ্ঞানিক গবেষণায় কোনো উদ্দেশ্যের ভিত্তিতে ব্যবহৃত
হয়। পরিবর্তনশীলতা চলকের প্রধান বৈশিষ্ট্য।
চলকের প্রকারভেদ:
চলক যাতে যথাযথ ক্রিয়াশীল হয়ে গবেষণাকর্মে
সহায়তা করতে পারে তার ভিত্তিতে চলককে বিভিন্নভাগে ভাগ করা যায়।
(ক) প্রকৃতিগত দিক থেকেঃ প্রকৃতিগত দিক থেকে চলককে ২ ভাগে ভাগ করা যায়। যথা:
১. গুণবাচক চলক (Qualitative
Variable) ও
২. পরিমাণবাচক চলক (Quantitative
Variable)।
১. গুণবাচক চলক:
যে সমস্ত চলক গুণবাচক বৈশিষ্ট্যের প্রতিনিধিত্ব
করে এবং যাকে সরাসরি বা প্রত্যক্ষভাবে সংখ্যাতাত্ত্বিকভাবে উপস্থাপন করা যায় না তাকে
গুণবাচক চলক বলে। যেমন: বুদ্ধি, গায়ের রং, আবেগ প্রবণতা, মনোভাব প্রত্যাশা ইত্যাদি।
২. পরিমাণবাচক বা সংখ্যাবাচক চলক:
যে সমস্ত চলক বৈশিষ্ট্যের আলোকে পরিমাপযোগ্য
ও উপস্থাপনযোগ্য অর্থাৎ যাকে সংখ্যাগতভাবে পরিমাপ ও সুস্পষ্টভাবে উপস্থাপন করা যায়,
তাকে পরিমাণবাচক চলক বলে। যেমন: বয়স, ওজন, উচ্চতা, আয় ইত্যাদি।
খ) গতিপথের নিরিখেঃ গতিপথের নিরিখে চলকরে আবার দুভাগে ভাগ করা যায়। যথাঃ
১. বিচ্ছিন্ন চলক:
যে সমস্ত চলক একটি নির্দিষ্ট উচ্চ ও নিম্ন সীমার মধ্যে বিভাজিত মান উল্লেখ করে এবং যার মধ্যে কোনো ফাঁক বা বিচ্ছেদ থাকে না তাকেই বিচ্ছিন্ন চলক বলে। এই ধরনের চলককে ভেঙে প্রকাশ করা যায় না।
২. অবিচ্ছিন্ন চলক:
যেসব চলক একটি পরিসীমার মধ্যে যেকোনো সংখ্যা
মান গ্রহণ করতে পারে তাকে অবিচ্ছিন্ন চলক। বলে। এসব চলককে একটি নির্দিষ্ট পরিসীমার
মধ্যে পরিমাপ করা যায়।
(গ) পদ্ধতিগত দিক থেকে: পদ্ধতিগত দিক থেকে চলককে প্রধানত তিনভাগে ভাগ করা যায়। যথা:
১. স্বাধীন চলক (Independent
Variable);
২. নির্ভরশীল চলক (Dependent
Variable) ও
৩. নিয়ন্ত্রিত চলক (Controlled
Variable)
১. স্বাধীন চলক:
যে চলক অন্য কোনো চলকের সাহায্য ছাড়া ঘটনার
উপর প্রভাব সৃষ্টি করতে পারে তাকে স্বাধীন চলক বলে। উদাহরণ: যদি একটি অনুকল্প তৈরি
করা হয় যে, 'ধূমপান ফুসফুসে ক্যান্সারের জন্ম দেয়' এখানে 'ধূমপান' স্বাধীন চলক।
২. নির্ভরশীল চলক:
যে সকল চলক অন্য চলকের উপর প্রভাব বিস্তার
করতে পারে না, বরং অন্য চলক দ্বারা প্রভাবিত হয় তাকে নির্ভরশীল চলক বলে। যেমন ধূমপান
ফুসফুসের ক্যান্সার সৃষ্টি করে। এখানে 'ধূমপান' স্বাধীন চলক এবং 'ফুসফুসের ক্যান্সার'
হলো নির্ভরশীল চলক। তেমনিভাবে দারিদ্র্যই নিরক্ষরতার কারণ, এখানে 'দারিদ্র্য' স্বাধীন
চলক এবং 'নিরক্ষরতা' নির্ভরশীল চলক।
৩. নিয়ন্ত্রিত চলক:
গবেষণার ভাষায় নিয়ন্ত্রিত চলককে অন্তর্বর্তী
চলক, বহিঃস্থ চলক, মধ্যবর্তী চলক ইত্যাদি হিসেবেও আখ্যায়িত করা হয়। নিয়ন্ত্রিত চলক
হলো সেসব চলক যা কোনো কার্যকারণ সম্পর্কের মধ্যে প্রভাব বিস্তার করতে পারে বলে গবেষক
তা নিয়ন্ত্রণে রাখেন যাতে গবেষণার ফলাফলকে। প্রভাবিত করতে না পারে।