বাংলাদেশের সমাজ গবেষণায় কোনো পদ্ধতি সবচেয়ে বেশি উপযোগী? ব্যাখ্যা কর।

বাংলাদেশের সমাজ গবেষণায় কোনো পদ্ধতি সবচেয়ে বেশি উপযোগী? ব্যাখ্যা কর। 

বাংলাদেশের সমাজ গবেষণায় কোনো পদ্ধতি সবচেয়ে বেশি উপযোগী? ব্যাখ্যা কর।

ভূমিকাঃ

সমাজ সবসময় পরিবর্তনশীল। সমাজের গঠন কাঠামোর উপাদানগুলো একটি অবস্থান থেকে প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হচ্ছে। সমাজবিজ্ঞান পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে বর্তমান অবস্থানে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশগুলোর একটি। 

এখানকার সমাজ গবেষণায় বিভিন্ন পদ্ধতি গ্রহণ করা যায়। কোনো একটি পদ্ধতি বেশি গুরুত্ব দিয়ে ব্যবহার করলে সঠিক ফলাফল নাও আসতে পারে। তাই সময় ও সমাজ উপযোগী গবেষণার পদ্ধতি ব্যবহার করতে হবে।

 

বাংলাদেশের সমাজ গবেষণায় গ্রহণযোগ্য পদ্ধতিঃ


বাংলাদেশে গ্রাম সমাজ নিয়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন গবেষণা পদ্ধতি ব্যবহার হয়েছে। বাংলাদেশে ব্যবহৃত গবেষণা পদ্ধতিগুলো হলো-

১. ঐতিহাসিক পদ্ধতি;

২. দার্শনিক পদ্ধতি;

৩. নৃতাত্ত্বিক পদ্ধতি;

৪. প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ ও পর্যবেক্ষণ পদ্ধতি;

৫. সামাজিক জরিপ পদ্ধতি;

৬. বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি বা পরিসংখ্যান পদ্ধতি ও

৭. ফোকাস দল আলোচনা পদ্ধতি।

ষাটের দশকে আমাদের দেশে সমাজ গবেষণা প্রাথমিকভাবে শুরু হয়। বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে এখানে বহুমুখী সমস্যা বিরাজমান। বিশেষ করে সামাজিক সমস্যাগুলো একটি আরেকটির সাথে মিলে জটিল আকার ধারণ করেছে।

এসব সমস্যার সমাধান এবং গ্রাম শহরের সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে একক কোনো পদ্ধতি ব্যবহার করা কার্যকর প্রভাব বিস্তার করে না। বহুমুখী সমস্যা সমাধানে একেক সময় একেক পদ্ধতি ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়।

তবে বাংলাদেশের সমাজ গবেষণায় কোনো পদ্ধতি বেশি উপযোগী বা গ্রহণযোগ্য সে বিষয়ে সমাজবিজ্ঞানী ও নৃবিজ্ঞানীদের মতভেদ রয়েছে। সমাজ গবেষণাপদ্ধতি ব্যবহারে বিষয়টি নির্ভর করে গবেষণার বিষয়বস্তু, লক্ষ্য, উদ্দেশ্য, এলাকার আর্থসামাজিক অবস্থা ইত্যাদির উপর।

বাংলাদেশের সমাজ বহুরূপী এখানে সমস্যাও নানামুখী। বাংলাদেশের সমাজ গবেষণায় এ পর্যন্ত ঐতিহাসিক, নৃতাত্ত্বিক, প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণমূলক পর্যবেক্ষণ পদ্ধতি বেশি ব্যবহার হয়েছে। এছাড়া সামাজিক জরিপকার্যও ব্যবহার করা হয়েছে। 

প্রয়োজন বিবেচনা করে এগুলো ব্যবহার করা  হয়েছে। বাংলাদেশের সমাজবিজ্ঞানের পথিকৃৎ প্রফেসর ড. এ. কে. নাজমুল করিম বলেন, বাংলাদেশের অধিকাংশ গবেষণাকর্ম পদ্ধতি সম্পাদিত হয়েছে উপর্যুক্ত পদ্ধতিগুলো প্রয়োগের মাধ্যমে।

কিন্তু বর্তমানে সময়ের আবর্তে সমাজ গতিশীল হয়েছে। সমাজের গঠন কাঠামোর উপাদান পরিবর্তন হচ্ছে খুব দ্রুত। তাই পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সমাজবিজ্ঞানের নতুন ধারা অনুযায়ী গবেষণাকর্ম পরিচালনা করতে হবে। 

সে হিসেবে বর্তমানে বাংলাদেশের গ্রামসমাজের জন্য প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ ও পর্যবেক্ষণ পদ্ধতি ও সামাজিক জরিপ পদ্ধতি বেশি উপযোগী। এছাড়াও ফোকাস দল আলোচনা পদ্ধতির গুরুত্বও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

প্রতিটি বিজ্ঞানেরই একটি নিজস্ব ধারা রয়েছে। সেই ধারা অনুযায়ী বিজ্ঞান পরিচালিত হয়। বাংলাদেশের সমাজের ধারা অনুযায়ী একক কোনো পদ্ধতির উপকারিতা পাওয়া সম্ভব নয়। এখানে সমস্যার প্রয়োজনীয়তার উপর নির্ভর করে সমাজবিজ্ঞানীদের গবেষণার পদ্ধতি নির্ধারণ করতে হবে। সমাজব্যবস্থার সাথে সামঞ্জস্যবিধান করে গবেষণাকর্ম পরিচালনা করে সমাজবিজ্ঞানকে সমাজ উপযোগী রাখতে হবে।


উপসংহার: 

পরিশেষে বলা যায় যে, বাংলাদেশের সমাজ গবেষণায় একক কোনো পদ্ধতি গ্রহণযোগ্য নয়। এখানে একক কোনো পদ্ধতি ব্যবহার করে কার্যকর ফলাফল আশা করা সম্ভব নয়। বাংলাদেশের সমাজ গবেষণায় পর্যবেক্ষণ, সাক্ষাৎকার, প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ পদ্ধতি ও ফোকাস দল আলোচনা পদ্ধতি প্রয়োজন সাপেক্ষে ব্যবহার করতে হবে। গবেষণার লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও সমস্যার ধরন অনুযায়ী গবেষণাকর্ম সম্পাদন করতে হবে।  তাই সমাজবিজ্ঞানীদের বাংলাদেশের সমাজ গবেষণায় কোনো পদ্ধতি ব্যবহার করতে হবে তার সঠিক জ্ঞান থাকা উচিত।


Post a Comment

Previous Post Next Post