সামাজিক গবেষণায় নমুনায়নের উপযোগিতা পর্যালোচনা কর

সামাজিক গবেষণায় নমুনায়নের উপযোগিতা পর্যালোচনা কর

সামাজিক গবেষণায় নমুনায়নের উপযোগিতা পর্যালোচনা কর

ভূমিকা: 

নমুনায়নের সমগ্রকের একটি ক্ষুদ্রতম অংশ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে তার ভিত্তিতে সমগ্রক সম্পর্কে মন্তব্য করা হয়। সমগ্রকের প্রতিটি উপাদান থেকে তথ্য সংগ্রহ না করে এর একটি অংশ নির্বাচন করে তা থেকে তথ্য নেওয়া হয় বলে সমগ্রকের বৈশিষ্ট্য জানার জন্য নমুনায়ন যৌক্তিক কিনা ইহা বিচার্য বিষয়। শুমারির তুলনায় নমুনায়নের ব্যবহার উপযোগিতা, ত্রুটি-বিচ্যুতির পরিমাণ এবং বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি হিসেবে গ্রহণযোগ্যতা বিচারের মাধ্যমে এর যৌক্তিকতা প্রতিপন্ন হয়।

নমুনায়নের উপযোগিতা:

নমুনা হলো তথ্যবিশ্বের একটি প্রতিনিধিত্বশীল ক্ষুদ্র অংশ, যা পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ করে তথ্যবিশ্বের প্রকৃতি, বৈশিষ্ট্য ও পরামান সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণ বা অনুমান করা হয়। আর নমুনা চয়ন প্রক্রিয়াই হলো নমুনায়ন।

পক্ষান্তরে, সামাজিক গবেষণা হচ্ছে এমন একটি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি, যা সামাজিক প্রপঞ্চের তথ্য সংগ্রহ, বিশ্লেষণ ও সাধারণ কারণের মাধ্যমে বিদ্যমান ধারণা ও তত্ত্বে পরিবর্তন, পরিবর্ধন অথবা নতুন তত্ত্ব আবিষ্কারের চেষ্টা করে এবং এসবের মাধ্যমে মানবীয় আচরণ ব্যাখ্যা করে।

সামাজিক গবেষণার ক্ষেত্রে সময়, শ্রম, অর্থ ও দক্ষতার প্রশ্ন জড়িত। গবেষণাধীন বিষয়ের পরিধি অর্থাৎ সমগ্রক বা তথ্যবিশ্ব বড় হলে তা পরিচালনা করা যেমন কষ্টসাধ্য ও সময়সাপেক্ষ ব্যাপার, তেমনি জনবল, অর্থ এবং সঠিক ফলাফল প্রাপ্তির সমস্যার প্রশ্ন দেখা দেয়।

সমগ্রকের প্রতিটি একক থেকে তথ্য সংগ্রহ না করে সমগ্রকের একটি প্রতিনিধিত্বশীল ক্ষুদ্র অংশের উপর গবেষণা করে যদি কাঙ্খিত ফলাফল পাওয়া যায়, তবে নানা দিক বিবেচনায়, সেটিই উত্তম বলে বিবেচিত। সমাজ গবেষকরা এজন্যই নমুনাধনের মাধ্যমে গবেষণা কাজ পরিচালনা করেন।

বৃহত্তর এককের চেয়ে ক্ষুদ্র এককসমূহ নিয়ন্ত্রণ না থাকলে তা ফলপ্রসূ হয় না। নমুনায়নের মাধ্যমে তথ্য সংগৃহীত হলে যে নমুনায় ত্রুটি দেখা দেয় তা পরিমাপ করা সম্ভব।  ফলে গবেষণার ফলাফলের সঠিকতা ও যথার্থতা রক্ষা করা যায়।

নমুনার মাধ্যমে গবেষণা পরিচালিত হলে গবেষণার পুনরাবৃত্তি সম্ভব হয়। প্রয়োজন সাপেক্ষে প্রাপ্ত তথ্যের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য পুনরাবৃত্তি প্রয়োজন। নমুনায়ন তথ্য সংগ্রহের একক নির্বাচনের একটি বিজ্ঞানভিত্তিক পদ্ধতি। এটি সার্বিক অর্থেই একটি সাশ্রয়ী পদ্ধতি। এসব কারণে সামাজিক জরিপে এটি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।


নমুনায়নের নিম্নোক্ত বৈশিষ্ট্যপূর্ণ সুবিধাবলি লক্ষণীয়:


১. নমুনায়ন একটি মিতব্যয়ী পদ্ধতি। সমগ্রকের প্রতিটি উপাদান থেকে তথ্য সংগ্রহ না করে প্রতিনিধিত্বশীল একটা অংশ থেকে তথ্য সংগৃহীত হয় বলে অর্থ, সময় ও শ্রম বাঁচে।

২. নমুনায়নের মাধ্যমে দ্রুত ফলাফল পাওয়া যায়। ফলে এর ব্যবহারযোগ্যতা বেশি।

৩. নমুনায়নে অল্পসংখ্যক একক থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয় বলে অনুসন্ধানকারী বা গবেষকের নিয়ন্ত্রণ কার্যকরী হয়। ফলে ত্রুটি-বিচ্যুতির পরিমাণ কমিয়ে আনা সম্ভব হয় এবং প্রাপ্ত ফলাফল অধিক নির্ভরযোগ্য বা যথার্থ এবং গ্রহণযোগ্য হয়।

৪. নমুনায়ন স্বল্প পরিসরের জরিপ বলে প্রশিক্ষিত কর্মী নিয়োগ করা হয়।

৫. অনেক গবেষণায় বিশেষ ব্যক্তি ও বিশেষ যন্ত্রপাতির প্রয়োজন। শুমারির তুলনায় নমুনায়নই এক্ষেত্রে উপযুক্ত।

৬. গবেষণাধীন বস্তুকে বিনষ্ট করে এর বৈশিষ্ট্য বা ফলাফল জানার প্রয়োজন হলে নমুনায়নই উৎকৃষ্ট পদ্ধতি।

৭. নমুনা চয়নের বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি রয়েছে। ফলে নমুনায়ন একটি যৌক্তিক পদ্ধতি।

উপরিউক্ত অবস্থা, সুবিধা ও কারণ বিবেচনায় নমুনায়নের যৌক্তিকতা রয়েছে। সতর্কতার সাথে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরণ করে নমুনা চয়ন করা হলেও নমুনা জরিপ পরিচালিত হলে শুমারির তুলনায় ইহা ভালো ফলাফল প্রদান করে।  অতএব নমুনায়ন একটি যৌক্তিক পদ্ধতি।

You May also like: সামাজিক প্রতিষ্ঠান বলতে কী বুঝ?

উপসংহার:

পরিশেষে বলা যায়, সমাজ গবেষণায় শুমারির তুলনায় নমুনায়নের অনেক বেশি ব্যবহার উপযোগিতা বিদ্যমান। স্বল্প সময়, স্বল্প শ্রম, স্বল্প অর্থ অথচ অধিক নিয়ন্ত্রণ নমুনায়নের মাধ্যমে সম্ভব বলে সামাজিক গবেষণায় নমুনায়নের ব্যবহার যৌক্তিক ও যথার্থ বলে বিবেচিত হয়।

Post a Comment

Previous Post Next Post