সামাজিক গবেষণায় পূর্বানুমান যাচাইয়ের ধাপগুলো আলোচনা কর

সামাজিক গবেষণায় পূর্বানুমান যাচাইয়ের ধাপগুলো আলোচনা কর

সামাজিক গবেষণায় পূর্বানুমান যাচাইয়ের ধাপগুলো আলোচনা কর

ভূমিকা:

অনুমিত সিদ্ধান্ত বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির একটি অপরিহার্য উপাদান। অনুমিত সিদ্ধান্ত বা সম্পর্কানুমান একটি অপরিহার্য হাতিয়ার হিসেবে বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানকর্ম পরিচালনায় সহায়ক হয়। এ কারণে অনুকল্প বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির অন্যতম মৌলিক উপাদান হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে।

 

অনুকল্প বা Hypothesis-এর সংজ্ঞা:

 ইংরেজি Hypothesis শব্দের অর্থ হলো সম্পর্কানুমান বা অনুকল্প, অনুমিত সিদ্ধান্ত ইত্যাদি অর্থ প্রকাশ করে। কিন্তু এক্ষেত্রে অর্থের জটিলতার কারণে নির্দিষ্টভাবে হাইপোথিসিস বলাটাই যুক্তিযুক্ত।

Hypothesis শব্দটি দুটি গ্রিক শব্দ "Hypo" এবং "Tithenai" থেকে যার অর্থ Under এবং Place।খুব সহজ কথায় পরীক্ষণযোগ্য সম্ভাব্য সম্পর্কের বিবৃতিকে সম্পর্কানুমান বা Hypothesis বলা হয়। নিম্নে হাইপোথিসিস সম্পর্কে কতিপয় জনপ্রিয় সংজ্ঞা প্রদত্ত হলো।

 

G. A. Lundberg-এর মতে, The hypothesis is tentative justification, the validity of which remains to be tested" অর্থাৎ অনুমিত সিদ্ধান্ত হলো পরীক্ষামূলক সমর্থন যার বৈধতার জন্য পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন হয়।

 

Richard M. Grinnell (1997: 443) তত্ত্বের সঙ্গে অনুকল্পের নিবিড় সম্পর্কের ইঙ্গিত দিয়ে বলেছেন যে, "সম্পর্কানুমান হলো একটি গবেষণার কাঙ্ক্ষিত ফলাফল সম্পর্কিত তত্ত্ব ভিত্তিক পূর্ববলন; একটি সম্পর্কে সম্বন্ধে সাময়িক ব্যাখ্যা বা সম্পর্কের অস্তিত্ব সম্বন্ধে অনুমান।"


তাই বলা যায়, অনুমিত সিদ্ধান্ত হলো স্বাধীন ও নির্ভরশীল চলকের মধ্যে অনুমিত সম্পর্কে একটি উক্তি যার সত্যাসত্য পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে নির্ধারণ করতে হয়।

 

অনুকল্প যাচাইয়ের ধাপ:


সাধারণত অনুকল্প যাচাই হলো নমুনার ভিত্তিতে সমগ্রকের পরামানের যথার্থ যাচাইয়ের একটি প্রক্রিয়া। মূলত এ অনুকল্পের প্রণয়নের উপরই কোনো গবেষণার সাফল্য ও ব্যর্থতা বহুলাংশে নির্ভর করে।


 এজন্য পূর্বানুমান প্রণয়নের ক্ষেত্রে যথেষ্ট সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়। আর তাই গবেষকগণ যখন অনুকল্প বা হাইপোথিসিস প্রণয়ন করেন। তখন তা যথার্থরূপে হয়েছে কি না যাচাই করেন। নিম্নে সংক্ষেপে অনুকল্প যাচাইয়ের ধাপসমূহ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:

 

১. সঠিক অনুকল্প প্রণয়ন:


 অনুকল্প প্রণয়নের প্রথম পদক্ষেপ হচ্ছে একটি যথার্থ বা সঠিক অনুকল্প প্রণয়ন, যা পরীক্ষা করা যায়। এক্ষেত্রে দুটি ভিন্নধর্মী অনুকল্প প্রণয়ন করা হয়। যথা:

(i) নাস্তি অনুকল্প (Null hypothesis) এবং (ii) বিকল্প অনুকল্প (Alternative hypothesis)।

 

(i) নাস্তি অনুকল্প:


যে পরিসংখ্যানিক কল্পনা বা অনুকল্প সত্যতা যাচাই করার জন্য গৃহীত হয়, তাকে নাস্তি কল্পনা বলে। অন্যভাবে বলা যায়, অনুকল্প যাচাইয়ের শুরুতেই সমগ্রক সম্পর্কে অনুসন্ধান বা কল্পনা করতে হয়, এরূপ কল্পনাকে নাস্তি কল্পনা বলে। নাস্তি অনুকল্পকে HO দ্বারা প্রকাশ করা হয়।

 

(ii) বিকল্প অনুকল্প:


যে কল্পনার বিপক্ষে নাস্তি কল্পনা যাচাই করা হয় তাকে বিকল্প অনুকল্প বলে। অর্থাৎ, এটি তথ্যবিশ্বের পরামান তথ্যবিশ্ব সম্পর্কে এমন উক্তি, যা নাস্তি অনুকল্পের বিকল্প হিসেবে গণ্য করা হয়। বিকল্প কল্পনাকে H দ্বারা প্রকাশ করা হয়।


২. উপাত্ত সংগ্রহ ও ব্যাখ্যা:


 কল্পনা গ্রহণ অথবা বাতিলের জন্য উপাত্ত সংগ্রহ করা প্রয়োজন। অনুকল্প যাচাইয়ের জন্য উপাত্ত সংগ্রহ একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। সাধারণত বিভিন্ন নমুনায়ন পদ্ধতির মাধ্যমে উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়।

এখানে অনুমান করে নেওয়া হয়েছে, উপাত্তগুলো আমাদের আছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে অনুকল্প যাচাই পদ্ধতিতে দৈব নমুনাগুলো পরিমিত বিন্যাস থেকে চয়ন করা হয় বলে অনুমান করা হয়।

 

৩. সুযোগমতো যথার্থতা যাচাই পর্যায় সৃষ্টি:


 সুযোগমতো থোর্থতা যাচাই পর্যায় সৃষ্টি অনুকল্প যাচাই পদ্ধতির তৃতীয় ধাপ। গৃহীত নাজি অনুকল্পটি গ্রহণ বা বাতিল হবে কি না তা নির্ভর করে সংশয়ের মাত্রা বা যথার্থ সীমার উপর। সাধারণ ৫% বা ১% সংশয় মাত্রা প্রয়োগ করে গবেষণা করা হয়ে থাকে। যখন আমরা ৫% সংশয় মাত্রা নিয়ে পরীক্ষা করব তখন ১০০ এর মধ্যে ৫টি দেব ঘটনা অনুষ্ঠিত হবে।

 

আমরা কল্পনাকে বাতিল বলে গণ্য করতে পারি এবং যখন এটিকে গ্রহণ করা হবে তখন আমরা শতকরা ৯৫ ভাগ নিশ্চিত হবে যে, আমরা সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সমর্থ হয়েছিল। যখন ৫% সংশায় মাত্রার নাস্তি কল্পনা বাতিল হলে গণ্য হবে, তখন ফলাফলকে অধিক তাৎপর্যপূর্ণ বলে ববেচিত করা যাবে।

 

৪. পছন্দমতো বিচারযোগ্য পরিসংখ্যানিক নির্ণয়:


 অনুকল্প হাচাইয়ের এ পর্যায়ে একটি সুবিধা মাত্রা পরীক্ষাযোগ্য পরিসংখ্যান নির্ণয় করা হয় এবং তার বিন্যাস কার্যকরী করা হয়। এ সম্পর্কে পরিসংখ্যানে বিভিন্ন ধরনের ব্যবস্থা রয়েছে।

 

৫. সংশয় এলাকা নির্ধারণ:


 যাচাই নমুনা মানের ভিত্তিতে নাস্তি কল্পনা বাতিল হলে এটি যেসব মানের জন্য বাতিল হয় তাদের সমন্বয়ে গঠিত অঞ্চলকে সংশয়ের এলাকা বলে। সাধারণত যখন কেউ ৫% সংশয় মাত্রা প্রয়োগ করে, তখন মনে করতে হবে যে, সে ব্যক্তি ৫% ঘটনাকে গ্রহণ করতে ইচ্ছুক এবং নাস্তি কল্পনাকে বাতিল করতে ইচ্ছুক।

 

৬. হিসাবনিকাশ করা:


অনুকল্প যাচায়ের ষষ্ঠ ধাপ হচ্ছে সমুদয় কাজের হিসাবনিকাশ সন্ধান করা। এখানে দৈবচয়নে এ সংখ্যক নমুনা আকারের বিভিন্ন ধরনের হিসাব সংগ্রহ করা হয়ে বাকে। বিশেষ করে এসব হিসাবনিকাশ প্রয়োজন হয় পরীক্ষিত বিষয়ের জন্য। তারপর লক্ষ করতে হয় নমুনা ফলাফল নির্ধারিত বিচারসীমার মধ্যে পতিত হয়েছে কি না।

 

৭. সিদ্ধান্ত গ্রহণ:


অনুকল্প যাচায়ের সর্বশেষ ধাপ হচ্ছে সিদ্ধান্ত গ্রহণ। এক্ষেত্রে যে কুল্পনাকে আমরা পরীক্ষা করব তা যদি সংশয়ে মাত্রায় পর্যবেক্ষিত ফলাফলের সম্ভাবনা শতকরা ৫ ভাগের কম হয়, তখন আমরা নাস্তি কল্পনাকে বাতিল বলে গণ্য  করব। 

তখন নমুনা পরিসংখ্যান এবং কল্পিত পরিমাণের মধ্যে পার্থক্য তাৎপর্যপূর্ণ বলে স্বীকৃতি হবে। অপরপক্ষে, যদি পরীক্ষায় নির্ণেয় পরিসংখ্যান অবাতিল সীমায় পতিত হয়, তখন নাস্তি কল্পনা গ্রহণযোগ্য হবে। এ সময় নমুনা ফলাফল এবং কল্পিত পরিমাণের মধ্যে পার্থক্য তাৎপর্যপূর্ণ বলে গণ্য হবে।

 

উপসংহার:

আলোচনা শেষে বলা যায় যে, কোনো গবেষণাকার্য সম্পাদনের জন্য নির্বাচিত এক বা একাধিক চলকের মধ্যে অনুমিত এবং যাচাইযোগ্য সম্পর্ককে অনুকল্প বলে। বস্তুত কোনো গবেষণার সাফল্য ও ব্যর্থতা অনেকাংশেই নির্ভর করে যথার্থ পূর্বানুমান প্রণয়নের উপর। একটি সফল অনুকল্প যাচাইয়ের উল্লিখিত সাতটি স্তর বা ধাপ বিদ্যমান। যা সামাজিক গবেষণায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

Post a Comment

Previous Post Next Post