মুহম্মদ ঘুরি সম্পর্কে সংক্ষেপে লিখ
মুহম্মদ
ঘুরি সম্পর্কে সংক্ষেপে লিখ। মুহম্মদ ঘুরি কে ছিলেন?
সুলতান মুইজউদ্দিন মুহাম্মদ ঘুরির পরিচয়:
মুহাম্মদ ঘুরির প্রকৃত নাম মুইজউদ্দিন মুহাম্মদ বিন সাম । তার সাম্রাজ্যের কেন্দ্র ছিল বর্তমান আফগানিস্তানের ঘুর প্রদেশ। মুহাম্মদ ঘুরি অসাধারণ সমর প্রতিভাধর ও ক্ষমতাবান শাসক ছিলেন । ১২০৩ খ্রিষ্টাব্দে গিয়াসউদ্দিনের মৃত্যুর পর তিনি ঘুর সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হন।
তিনি ভারতবর্ষে সর্বপ্রথম স্থায়ী মুসলিম সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার কৃতিত্ব অর্জন করেন। সংগত কারণেই ইতিহাসবিদরা তাকে ভারতে মুসলিম সাম্রাজ্যের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতার (The real Founder) মর্যাদা দেন ।
রাষ্ট্রনায়ক ও সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠাতা:
মুহাম্মদ ঘুরি ছিলেন একজন দূরদর্শী ও বাস্তববাদী
রাজনীতিবিদ। তার লক্ষ্য ছিল ভারতে স্থায়ী মুসলিম সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা। তিনি ভারতের
বিশৃঙ্খল রাজনৈতিক পরিস্থিতির পূর্ণ সুযোগ গ্রহণ করেন এবং কোনো পরাজয়ে হতোদ্যম না
হয়ে লক্ষ্য বাস্তবায়নে অবিচল দৃঢ়তার পরিচয় দেন।
ফলে তিনি বাংলা থেকে আফগানিস্তান পর্যন্ত একটি বিশাল
সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হন। ভারতে তিনি যে মুসলিম সাম্রাজ্যের গোড়াপত্তন করেন
তা প্রায় ৭০০ বছর স্থায়ী হয়েছিল। শুধু সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা নয়, একটি সুষ্ঠু ও ন্যায়সংগত
শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় তিনি অসাধারণ কৃতিত্ব দেখিয়েছেন। বস্তুত সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা
ও সুষ্ঠু শাসনব্যবস্থা কায়েম করে মুহাম্মদ ঘুরি ইতিহাসে স্থায়ী আসন দখল করে নিয়েছেন
।
সমরনেতা ও সংগঠক:
মুহাম্মদ ঘুরি ছিলেন অসাধারণ সামরিক প্রতিভার অধিকারী।
এ.বি.এম. হবিবুল্লাহ বলেন, “শীর দরিয়া থেকে যমুনা পর্যন্ত
প্রায় সাংবাৎসরিক সামরিক অভিযান তার সমরকুশলতা উল্লেখযোগ্যরূপে প্রমাণ করে।”
প্রতিভা আবিষ্কারে ঘুরি ছিলেন সিদ্ধহস্ত।
তিনি কুতুবউদ্দিন আইবেক, ইয়ালদুজ ও তুগ্রিলের মতো প্রশিক্ষিত ব্যক্তিদের তার বিজয়াভিযান
ও রাজ্য সংগঠনে সাফল্যের সাথে কাজে লাগাতে সক্ষম হন।
অনেকেই মনে করেন, মুহাম্মদ ঘুরি তার বিশ্বস্ত ক্রীতদাস ও সেনাপতি কুতুবউদ্দিন আইবেককে ভারতবর্ষের অধিকৃত অঞ্চলে প্রতিনিধি শাসক নিযুক্ত না করলে ভারতে তথাকথিত দাস বংশ প্রতিষ্ঠিত হতো না এবং মুসলমানদের স্থায়ী সাম্রাজ্য বা রাজনৈতিক কাঠামোও প্রতিষ্ঠিত হতো না।
শিল্প ও সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষক:
এ.বি.এম. হবিবুল্লাহ বলেন, “সমরক্ষেত্রে কর্মব্যস্ততার
কারণে তিনি (ঘুরি) হয়তো শিল্প- সংস্কৃতির দিকে মনোযোগ দিতে পারেননি। কিন্তু তিনি জ্ঞানচর্চার
প্রতি উদাসীন ছিলেন না।” প্রখ্যাত জ্ঞানতাপস দার্শনিক ফখরুদ্দিন
আল রাজি, ক্লাসিক্যাল কবি নিজামী ও উরুযী তার দরবার অলংকৃত করেছিলেন।
তার প্রতিনিধি কুতুবউদ্দিন আইবেক আজমিরে
‘আড়াই দিনকা ঝোপড়া
মসজিদ' এবং দিল্লিতে 'কুওয়াতুল ইসলাম' নামে যে মসজিদ নির্মাণ করেন তা ভারতে ইন্দো-মুসলিম
স্থাপত্যরীতির সূচনা করে ।
মুহাম্মদ ঘুরির চরিত্র ও কৃতিত্বঃ
মানুষ হিসেবে মুহাম্মদ ঘুরি অনুপম চরিত্র ও আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বের অধিকারী ছিলেন। দৃঢ় মনোবল, আত্মপ্রত্যয়, ধর্মনিষ্ঠা, সত্যবাদিতা, ন্যায়পরায়ণতা ও দানশীলতা তার উল্লেখযোগ্য চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ছিল।
উপসংহারঃ ঐতিহাসিক আবুল কাসিম ফিরিস্তা তাকে আল্লাহভীরু, সত্যনিষ্ঠ এবং প্রজারঞ্জক সুলতান হিসেবে অভিহিত করেছেন। ঐতিহাসিকগণ তাকে অনন্য কৃতিত্বের অধিকারী বলে মত দিয়েছেন।