মালিক কাফুর সম্পর্কে কী জান?
১২৯৯ খ্রিস্টাব্দে আলাউদ্দিনের বাহিনী
যখন গুজরাট অভিযান করে, তখন সেনাপতি নুসরাত খান মালিক কাফুরকে বন্দি অবস্থায় দাস বাজার
থেকে কিনে আনেন এবং সুলতানকে উপহার দেন। তার মূল্য ছিল এক হাজার দিনার। তাই তাকে হাজার
দিনারি' বলা হয়।
মালিক কাফুর ছিলেন খোজা। তাকে প্রথমে হারেমরক্ষী
হিসেবে নিয়োগ করা হয় বলে জানা যায় সেকালের অনেক রচনায়। কিন্তু ভারতীয় ক্রীতদাস
প্রথায় দাসরাও স্বীয় প্রতিভায় উঠে আসতে পারতেন ক্ষমতার শীর্ষে। সেই প্রতিভা মালিক
কাফুরের ছিল।
মোঙ্গল আক্রমণের সময় রণক্ষেত্রে তিনি
অসামান্য বীরত্বের পরিচয় দেন। সুলতান আলাউদ্দিন খলজির দাক্ষিণাত্য বিজয়ের ডান হাত
ছিলেন মালিক কাফুর। বিন্ধ্যপর্বতের দক্ষিণে ইসলামের পতাকা তিনিই বহন করে নিয়ে গিয়েছিলেন
বলে জানান ইতিহাসবিদরা।যাদব, কাকতীয়, হোয়সল, পাণ্ড্য বংশীয় রাজাদের তিনি দিল্লি
সালতানাতের অধীনে আনেন । সেই সাথে নিজে অধিকার করেন বিপুল পরিমাণ ধনরত্ন ।
আলাউদ্দিনের আস্থাভাজন হয়ে উঠতে দেরি
হয়নি মালিক কাফুরের। ক্রমেই সুলতানির বিভিন্ন কাজে তিনি অপরিহার্য হয়ে উঠতে শুরু
করেন। একসময়ে তিনিই হয়ে দাঁড়ান আলাউদ্দিনের প্রধান পরামর্শদাতা। ১৩১৩ থেকে ১৩১৫
খ্রি. পর্যন্ত তিনি দেবগিরির শাসনকর্তাও ছিলেন।
আলাউদ্দিনের মৃত্যুর পরে তিনি স্বয়ং মসনদ
দখলের চেষ্টা করেন। আলাউদ্দিনের নাবালক পুত্র শিহাবউদ্দিন ওমরকে হাতের পুতুল বানিয়ে
মাসখানেক শাসনও করেন দিল্লির দরবার। কিন্তু আলাউদ্দিনের ব্যক্তিগত রক্ষীরা তার এই উত্থানকে
বিষনজরে দেখেছিলেন। তারা সুযোগ বুঝে মালিক কাফুরকে হত্যা করেন। ক্ষমতায় আসেন আলাউদ্দিনের
জ্যেষ্ঠ পুত্র মুবারক শাহ ।
আলাউদ্দিনের সাথে মালিক কাফুরের সম্পর্কের
মাত্রাটি যে কেবল প্রভু-ভৃত্যের ছিল না, সেই ইঙ্গিত রেখেছিলেন সাহিত্যিক শরবিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়
তার ‘শঙ্খ কঙ্কন' নামের
ঐতিহাসিক আখ্যানে। সেখানে আলাউদ্দিনকে তিনি প্রায় নরপশু হিসেবে চিহ্নিত করেন। আর সেখানে
মালিককে তিনি দেখান প্রভুর যাবতীয় কুকর্মের সহচর হিসেবে।
ইতিহাসবিদরা কিন্তু অনেকেই মালিকের শৌর্যের
প্রশংসা করেছেন। মালিক না থাকলে দাক্ষিণাত্য দিল্লির পতাকাতলে আসত না, এমন কথা প্রায়
সকলেই একবাক্যে বলেছেন । ভারতের ইতিহাসের সেই ছায়াময় দিনগুলোয় তার উপস্থিতি আজও
আলোচনার অবকাশ রাখে ।