চল্লিশ চক্র' সম্পর্কে সংক্ষেপে বর্ণনা কর । বন্দেগান-ই-চেহেলগান কি?

চল্লিশ চক্র' সম্পর্কে সংক্ষেপে বর্ণনা কর । বন্দেগান-ই-চেহেলগান কি?

চল্লিশ চক্র' সম্পর্কে সংক্ষেপে বর্ণনা কর । বন্দেগান-ই-চেহেলগান কি?

'চল্লিশ চক্র' সম্পর্কে সংক্ষেপে বর্ণনা কর ।  বন্দেগান-ই-চেহেলগান কি?

চল্লিশ চক্র' বা বন্দেগান-ই-চেহেলগান' অর্থ চল্লিশ দাস গোষ্ঠী।  সুলতান ইলতুৎমিশের সময়ে (১২১১-১২৩৬ খ্রি.) চল্লিশজন বিশ্বস্ত ও সুযোগ্য ক্রীতদাসদের নিয়ে গঠিত সংগঠনকে বন্দেগান-ই-চেহেলগান' বা চল্লিশ চক্র' বলা হয়।

ইলতুৎমিশের সময় গঠিত চল্লিশ চক্র' নামে ক্রীতদাসদের এ সংগঠনটি শাসনকার্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ইলতুৎমিশ পরবর্তী দুর্বল সুলতানদের (রুকনউদ্দিন ফিরোজ শাহ, মুইজউদ্দিন বাহরাম শাহ প্রমুখ) শাসনামলে তারা সর্বেসর্বা হয়ে ওঠে এবং শাসনদণ্ড নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করে । পরবর্তী সময়ে সুলতান গিয়াসউদ্দিন বলবন তাদেরকে কঠোরভাবে দমন করেন ।

ভূমিকা : 

দিল্লি সালতানাতের ইতিহাসে বন্দোনই চেহেলাগান বা চল্লিশ চক্র একটি গুরুত্বপূর্ণ ও প্রভাবশালী গোষ্ঠী। দিল্লি সালতানাতের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা ইলতুৎমিশ স্বীয় বংশের নিরাপত্তা ও গৌরব বৃদ্ধির জন্য এ বন্দেগান-ই চেহেলগান প্রতিষ্ঠা করেন । এটি ছিল ইলতুৎমিশের উল্লেখ্যযোগ্য কৃতিত্ব।

 চল্লিশ চক্র : 

বিখ্যাত সমরনেতা ও শাসক ইলতুৎমিশের গঠনকৃত চল্লিশ চক্র সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলো:

১. বিশিষ্ট চল্লিশ চক্রের পরিচয় : 

সুচারুরূপে শাসনকার্য পরিচালনা এবং স্বীয় বংশের নিরাপত্তা গৌরব বৃদ্ধির জন্য ইলতুৎমিশ ও তার ৪০ জন ক্রীতদাশকে অগ্রাধিকার প্রদান করেন। এরা শাসনকার্য পরিচালনার ব্যাপারে সুলতানকে ক বিভিন্নভাবে সহায়তা করতো। বিশ্বস্ততা ও যোগ্যতার কারণে এরা আমির ও মালিকদের পদমর্যাদায় নিজেদের প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছিল। ভারতের রাজত্বের ইতিহাসে এরাই বিখ্যাত চল্লিশ চক্র বা বন্দেগী -ই-চেহেলগান নামে পরিচিত।

২. চল্লিশ চক্রের প্রভাব : 

কালক্রমে এ চল্লিশ চক্র এত ক্ষমতা অর্জন করে যে আমির ও মালিকের মতো তারা রাজ্যের ল সর্বেসর্বা হয়ে ওঠেন। এমনকি সুলতান ও তাদের ক্রীড়নকে  পরিণত হন।


৩. চল্লিশ চক্রের কয়েকজন বিখ্যাত সদস্য :

গিয়াসউদ্দিন বলবন, বদরউদ্দিন, মুহাম্মদ জুনাইদি, ফখরুলমুলক, আহাতসিন বদরুদ্দিন সুংকর, ইমাদউদ্দিন রায়হান এবং কাশলী খান প্রমুখ ।

৪. চল্লিশ চক্রের দৌরাত্ম্য : 

সুলতান ইলতুৎমিশের তিরোধানের পর তারা পরোক্ষভাবে সালতানাতের পদ দখল করে নেয়। তারা পছন্দমতো ব্যক্তিদেরকে সিংহাসনে বসাত। তারা ক্রমানয়ে রুকুনউদ্দিন, সুলতানা রাজিয়া ও বাহরাম শাহকে সিংহাসনে বসান।

৫. চল্লিশ চক্রের পতন : 

চল্লিশ চক্রের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন বিখ্যাত শাসক গিয়াসউদ্দিন বলবন। বলবন ক্ষমতাসীন হওয়ায় এ দল তার বিরুদ্ধে বিদ্বেষপোষণ করে এবং তার পতন ঘটাবার চেষ্টা করে। বলবন তাদের কার্যকলাপে শঙ্কিত হয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করেন এবং চল্লিশ চক্রের পতন ঘটে ।

You May also like: গজনিরসুলতান মাহমুদের ভারত অভিযানের উদ্দেশ্যসমূহ বিশ্লেষণ কর।

উপসংহার : 

পরিশেষে বলা যায় যে, সুলতান গিয়াসউদ্দিন বলবন যদি চল্লিশ চক্র কঠোরহস্তে দমন না করতেন তাহলে দিল্লি সালতানাতের ইতিহাস হয়ত অন্যভাবে লেখা হতো। 

 


Post a Comment

Previous Post Next Post